সমীকরণ বা সমতা সম্পর্কে আমাদের ধারণা হয়েছে। কিন্তু বাস্তব জীবনে অসমতারও একটা বিস্তৃত ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
মনে করি একটি ক্লাসের ছাত্রসংখ্যা 200 জন। স্বাভাবিকভাবে দেখা যায় যে, ঐ ক্লাসে সবদিন সকলে উপস্থিত থাকে না, সকলে অনুপস্থিতও থাকে না। একটি নির্দিষ্ট দিনে উপস্থিত ছাত্র সংখ্যা x হলে আমরা লিখতে পারি 0 x 200। একইভাবে আমরা দেখি যে, কোনো নিমন্ত্রিত অনুষ্ঠানেই সবাই উপস্থিত হয় না। পোশাক-পরিচ্ছদ ও অন্যান্য অনেক ভোগ্যপণ্য তৈরিতে পরিষ্কারভাবে অসমতার ধারণা প্রয়োজন হয়। দালান তৈরির ক্ষেত্রে, পুস্তক মুদ্রণের ক্ষেত্রে এবং এরকম আরও অনেক ক্ষেত্রে উপাদানগুলো সঠিক পরিমাণে নির্ণয় করা যায় না বিধায় প্রথম পর্যায়ে অনুমানের ভিত্তিতে উপাদানগুলো ক্রয় বা সংগ্রহ করতে হয়। অতএব দেখা যাচ্ছে যে, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে অসমতার ধারণাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
বাস্তব সংখ্যার ক্ষেত্রে
যদি ও কেবল যদি ধনাত্মক অর্থাৎ
যদি ও কেবল যদি ঋণাত্মক অর্থাৎ
অসমতার কয়েকটি বিধি :
ক)
খ) হলে যেকোনো c এর জন্য
এবং
গ) হলে যেকোনো c এর জন্য
এবং যখন
এবং যখন
উদাহরণ ১. x 2 হলে
ক) x + 2 4 [উভয়পক্ষে 2 যোগ করে]
খ) x – 2 0 [উভয়পক্ষে 2 বিয়োগ করে]
গ) 2x 4 [উভয়পক্ষকে 2 দ্বারা গুণ করে ]
ঘ) – 3x – 6 [উভয়পক্ষকে – 3 দ্বারা গুণ করে ]
এখানে উল্লেখ্য যে,
a b এর অর্থ a b অথবা a = b
a b এর অর্থ a b অথবা a = b
a b c এর অর্থ a b এবং b c যার অর্থ a c
উদাহরণ ২. 3 1 সত্য যেহেতু 3 1
2 4 সত্য যেহেতু 2 4
23 4 সত্য যেহেতু 23 এবং 3 4
উদাহরণ ৩. সমাধান কর ও সমাধান সেটটি সংখ্যারেখায় দেখাও: 4x + 4 16
সমাধান: দেওয়া আছে, 4x + 4 16
বা, 4x + 4 – 4 16 – 4 [উভয়পক্ষ থেকে 4 বিয়োগ করে]
বা, 4x 12
বা, [উভয়পক্ষকে 4 দ্বারা ভাগ করে]
বা,
নির্ণেয় সমাধান
এখানে সমাধান সেট,
সমীকরণের সাহায্যে তোমরা সমস্যা সমাধান করতে শিখেছ। একই পদ্ধতিতে অসমতা সম্পর্কিত সমস্যার সমাধান করতে পারবে।
উদাহরণ ৪. কোনো পরীক্ষায় বাংলা ১ম ও ২য় পত্রে রমা পেয়েছে যথাক্রমে এবং নম্বর এবং কুমকুম পেয়েছে এবং 84 নম্বর। কোনো পত্রে কেউ 40 এর নিচে পায়নি। বাংলা বিষয়ে কুমকুম হয়েছে প্রথম এবং রমা হয়েছে দ্বিতীয়। x এর মান সম্ভাব্য অসমতার মাধ্যমে প্রকাশ কর।
সমাধান: রমা পেয়েছে মোট নম্বর এবং কুমকুম পেয়েছে মোট নম্বর।
প্রশ্নমতে,
বা,
বা,
বা,
বা,
কিন্তু, [প্রাপ্ত সর্বনিম্ন নম্বর 40]
বা,
বা,
উদাহরণ ৫. একজন ছাত্র 5 টাকা দরে টি পেন্সিল এবং ৪ টাকা দরে টি খাতা কিনেছে। মোট মূল্য অনূর্ধ্ব 97 টাকা হলে, সর্বাধিক কয়টি পেন্সিল কিনেছে?
সমাধান: টি পেন্সিলের দাম টাকা এবং টি খাতার দাম টাকা।
প্রশ্নমতে,
বা,
বা,
বা,
বা,
ছাত্রটি সর্বাধিক 5 টি পেন্সিল কিনেছে।
আমরা দুই চলকবিশিষ্ট (যার সাধারণ আকার ) আকারের সরল সমীকরণের লেখচিত্র অঙ্কন করতে শিখেছি (অষ্টম ও নবম-দশম শ্রেণিতে)। আমরা দেখেছি যে, এ রকম প্রত্যেক লেখচিত্রই একটি সরলরেখা। স্থানাঙ্কায়িত XY সমতলে সমীকরণের লেখচিত্রের যেকোনো বিন্দুর স্থানাঙ্ক সমীকরণটিকে সিদ্ধ করে অর্থাৎ সমীকরণটির বামপক্ষে ও এর পরিবর্তে যথাক্রমে ঐ বিন্দুর ভুজ ও কোটি বসালে এর মান শূন্য হয়। অন্যদিকে, লেখস্থিত নয় এমন কোনো বিন্দুর স্থানাঙ্ক সমীকরণটিকে সিদ্ধ করে না অর্থাৎ ঐ বিন্দুর ভুজ ও কোটির জন্য এর মান শূন্য অপেক্ষা বড় বা ছোট হয়। সমতলস্থ কোনো বিন্দু P এর ভুজ ও কোটি দ্বারা রাশির ও কে যথাক্রমে প্রতিস্থাপন করলে রাশিটির যে মান হয়, তাকে P বিন্দুতে রাশিটির মান বলা হয় এবং উক্ত মানকে সাধারণত দ্বারা নির্দেশ করা হয়। P বিন্দু লেখস্থিত হলে , P বিন্দু লেখচিত্রের বহিঃস্থ হলে অথবা ।
বাস্তবে লেখচিত্রের বহিঃস্থ সকল বিন্দু লেখ দ্বারা দুইটি অর্ধতলে বিভক্ত হয়; একটি অর্ধতলের প্রত্যেক বিন্দু P এর জন্য ; অপর অর্ধতলের প্রত্যেক বিন্দু P এর জন্য। বলা বাহুল্য, লেখের উপর অবস্থিত প্রত্যেক বিন্দু P এর জন্য ।
উদাহরণ ৬. সমীকরণটি বিবেচনা করি।
সমীকরণটি থেকে পাওয়া যায়:
x | 0 | 3 | 1 |
y | 3 | 0 | 2 |
সমতলে ছক কাগজে ছোট বর্গক্ষেত্রের বাহুর দৈর্ঘ্যকে একক ধরে সমীকরণটির লেখচিত্রটি নিম্নরূপ হয় :
এই লেখচিত্র রেখা সমগ্র তলটিকে তিনটি অংশে পৃথক করে। যথা :
১. রেখার (ক) চিহ্নিত পাশের বিন্দুসমূহ
২. রেখার (খ) চিহ্নিত পাশের বিন্দুসমূহ এবং
৩. রেখাস্থিত বিন্দুসমূহ
এখানে (ক) চিহ্নিত অংশকে লেখরেখার উপরের অংশ ও (খ) চিহ্নিত অংশকে লেখরেখার নিচের অংশ বলা যায়।
(ক) চিহ্নিত পাশে তিনটি বিন্দু নিই। এই বিন্দুগুলোতে এর মান যথাক্রমে যাদের সবকটিই ধনাত্মক।
(খ) চিহ্নিত পাশে তিনটি বিন্দু নিই। এই বিন্দুগুলোতে এর মান যথাক্রমে যাদের সবকটিই ঋণাত্মক।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: লেখরেখার এক পাশে একটি বিন্দু নিয়ে সেখানে এর মান নির্ণয় করে রেখাটির দুই পাশ (ধনাত্মক ও ঋণাত্মক) নির্ণয় করা যায়।
উদাহরণ ৭. অথবা অসমতার লেখচিত্র অঙ্কন কর।
সমাধান: উপরোক্ত অসমতাদ্বয়ের লেখচিত্র অঙ্কন করতে প্রথমেই ছক কাগজে সমীকরণটির লেখচিত্র অঙ্কন করি।
সমীকরণ থেকে পাই
x | 0 | 3 | 1 |
y | 3 | 0 | 2 |
অসমতার লেখচিত্র অঙ্কনের জন্য উক্ত অসমতায় মূলবিন্দু (0,0) বসালে আমরা পাই −3 > 0 যা সত্য নয়। কাজেই, অসমতার ছায়াচিত্র হবে রেখার যে পাশে মূলবিন্দু রয়েছে তার বিপরীত পাশে।
অসমতার লেখচিত্র অঙ্কনের জন্য উক্ত অসমতায় মূলবিন্দু (0, 0) বসালে পাওয়া যায় –3 < 0 যা অসমতাকে সিদ্ধ করে বা মান সত্য। কাজেই, এ অবস্থায় অসমতার ছায়াচিত্র হবে রেখাটির যে পাশে মূলবিন্দু রয়েছে সে পাশে।